আমরা ঈদ উদযাপন করব, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে

বৃহস্পতিবার, মে ১৩, ২০২১,৯:১৩ অপরাহ্ণ
0
22

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে শুভেচ্ছা ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে তার এ ভাষণ শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ দেশের সব কটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হবে। আবেগের বশবর্তী হয়ে এমন কোনো কাজ যেন কেউ না করেন, যাতে সংক্রমণের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ব এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। কভিড-১৯ নামক এক মারণব্যাধি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অন্তরার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এই ভাইরাস একদিকে যেমন অগণিত মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিসাধন করছে মানুষের জীবন-জীবিকার। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং অর্থনীতির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই ভাইরাস। গত বছরের শেষদিকে যখন বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ অনেকটা কমতে শুরু করেছিল, তখন সবার সঙ্গে আমরাও আশান্বিত হয়েছিলাম যে বিশ্ববাসী বুঝি এই মারণব্যাধি ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি থেকে দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের সব পরিকল্পনা ও প্রত্যাশাকে নস্যাৎ করে দেয়।

তিনি বলেন, মানুষের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। কাজেই জনসমাগম এড়াতে না পারলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। এ কারণে কষ্ট হবে জেনেও আমরা বাধ্য হয়েছি মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে। দোকানপাট, শপিংমলসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখতে হচ্ছে। একই কারণে গণপরিবহন চলাচলের ওপরও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, জনগণের সহযোগিতায় এবং আমাদের সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আমরা বিগত এক বছর করোনা মহামারিজনিত আর্থিক অভিঘাত খুব ভালোভাবেই সামাল দিতে পেরেছি। আমরা যখন প্রথম ঢেউ সামলে অর্থনীতিকে আগের অবস্থার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার পর্যায়ে, তখনই মার্চে দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। এতে করে আমাদের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধিতে হয়তো খানিকটা ভাটা পড়বে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে এবারও আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। আমরা ঈদ উদযাপন করব, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কোনোভাবেই এই ঈদ উদযাপন যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ্য হয়ে না উঠে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। জনগণের প্রতি অনুরোধ: আপনারা আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে যাবেন না। অনেকের কোনো বাহ্যিক লক্ষণ না থাকায় আপনি বুঝতে পারবেন না আপনার পাশের ব্যক্তিটিই করোনাভাইরাস বহন করছে। এর ফলে আপনি যেমন করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়বেন, তেমনি আপনার নিকটাত্মীয় বা পাড়া-প্রতিবেশীকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন। মনে রাখবেন, সবার উপরে মানুষের জীবন। বেঁচে থাকলে আসছে বছর আবার আমরা আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারব।

তিনি বলেন, আসুন, আমরা সবাই যে যেখানে আছি সেখান থেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করি। বিত্তবান যারা আছেন বা যাদের সামর্থ্য আছে, তাঁদের প্রতি অনুরোধ, এই দুঃসময়ে আপনার দরিদ্র প্রতিবেশী, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়ান। তাঁদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার সাহায্য হয়তো একটি পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাবে। দেখবেন, তাদের হাসিমুখ আপনার হৃদয়মনকেও পরিপূর্ণ করে তুলবে ঈদের আনন্দে। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় কর্তব্য। আমরা যেন এই কর্তব্যকর্ম ভুলে না যাই।

শেখ হাসিনা বলেন, এই ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে গত বছরের মতো এ বছরও ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মসজিদে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, মানুষের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়, কাজেই জনসমাগম এড়াতে না পারলে এ রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। এ কারণে কষ্ট হবে জেনেও আমরা বাধ্য হয়েছি মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে। দোকানপাট, শপিংমলসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখতে হচ্ছে। একই কারণে গণপরিবহন চলাচলের উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

সবাই টিকার আওতায় আসবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে কার্যকর এবং পরীক্ষিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়েই আমরা গণটিকাকরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। আপনারা জেনেছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ টিকা রফতানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে রাশিয়া ও চীনের টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। উপহার হিসেবে ইতোমধ্যেই চীনের কাছ থেকে আমরা টিকা পেয়েছি। আমরা টিকা পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও অনুরোধ জানিয়েছি।

তিনি বলেন, বিশ্ব টিকাকরণ সংস্থা কোভ্যাক্সের কাছ থেকেও আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকা পাব। বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা এক কোটি টিকা কেনার ব্যবস্থা করছি। খুব শিগগিরই দেশে টিকা আসতে শুরু করবে। এ ছাড়াও দেশেই যাতে টিকা উৎপাদন করতে পারি সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। নিজেদের টিকা তৈরিতে কয়েক মাস সময় লাগবে। আমরা দেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসব, ইনশাআল্লাহ।

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে