আন্তর্জাতিকীকরণের ছোঁয়া লাগেনি ইবির চিকিৎসা সেবায়!

রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯,৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
0
35

[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]

এম.বি রিয়াদ, ইবি প্রতিনিধি: স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ইতোমধ্যে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ৪১ বছরে পদার্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমান প্রশাসনের উদ্যোগে নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজ হলেও উন্নয়ন হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় চিকিৎসালয়ের সেবার মানের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের চিকিৎসাসেবার জন্য স্থাপন করা হয়েছে এই আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্রটি। তিন তলা বিশিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্রটি থাকে সবসময় সুসজ্জিত। কিন্তু বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক সুন্দর মনে হলেও মিলছে না কাক্সিক্ষত সেবা। এখানে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১১ জন। আশানুরূপ সেবা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা খোলা থাকলেও মিলছে না কাক্সিক্ষত সেবা এই চিকিৎসা কেন্দ্রে। অপ্রতুল চিকিৎসক, ওষুধের সংকট, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ না থাকা, কর্মকর্তাদের অসৌজন্যমূলক আচরনসহ নানা অভিযোগে জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই দফতরটি।

অব্যস্থাপনা, ওষুধ না দেয়া, জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা না মেলার কারণে মামুলি রোগের চিকিৎসা নিতেও শিক্ষার্থীদের ছুটতে হচ্ছে বাইরের চিকিৎসা কেন্দ্রে। এতে বাড়তি টাকা ব্যয়ের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

সাধারণ চিকিৎসা ছাড়াও এখানে খোলা হয়েছে দন্ত বিভাগ ও চক্ষু বিভাগ। দন্ত বিভাগে রয়েছেন দু’জন চিকিৎসক। আর বিশেষজ্ঞ হিসেবে আছেন একজন চিকিৎসক; যিনি সপ্তাহে মাত্র দুইদিন বসেন। এটিকে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল মনে করেন সেবাগ্রহীতারা। দিনের বেলা যথেষ্ট ডাক্তার থাকলেও রাতের বেলা দায়িত্ব পালন করেন মাত্র একজন ডাক্তার। এরপরেও চিকিৎসকদের সার্বিক সেবাদানের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে জরুরী চিকিৎসায় বমি, মাথা ব্যাথা, এলার্জি, সর্দি, কাশিসহ ছোটখাটো সব রোগের চিকিৎসায় ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য দপ্তরগুলো বন্ধ হওয়ার পরপরই চিকিৎসক শূন্য হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ চিকিৎসা কেন্দ্রটি। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের অবস্থা আরও করূণ। ওই দুই দিন যেন নামেমাত্র হাজিরা দিতে আসেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘কয়েকদিন আগে রাতে আমি শারীরিক সমস্যার জন্য মেডিকেল সেন্টারে গিয়েছি। কিন্তু ডাক্তার ভালোভাবে পরীক্ষা না করেই ইনঞ্জেকশন দেয়ার পরামর্শ দেন। ডাক্তার নিজে না দিয়ে কর্মচারিদে দ্বারা ইনঞ্জেকশন দেয়ায় তিনি একই জায়গায় কয়েকবার সুঁই ফোড়েন।’

আরেক শিক্ষার্থী জানান, ‘এখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সেবা পাওয়া যায় না। সাধারণত অল্প দামের ওষুধ পাওয়া যায়। একটু বেশি দামের হলেই বাইরে থেকে কিনে আনার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।’

সম্প্রতি সাদিকুল নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, ‘রাত প্রায় চারটার দিকে বন্ধু খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন দিলে হলগেটে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর ফোন ধরে না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের। এর প্রতিকার জানতে চাই।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল অফিসার এসএম নজরুল বলেন, ‘প্রয়োজনের তুলনায় এখানে ডাক্তারের সংকট রয়েছে, সুযোগ সুবিধাও যথেষ্ট নেই। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভাল সেবা দিতে। পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাবে এখানে আমরা সব পরীক্ষা করতে পারি না। ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ালে এসব সমস্যা নির্মূল করা সম্ভব।’

বিঃদ্রঃ মানব সংবাদ সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ ও উৎসাহিত করে। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে