[ + ফন্ট সাইজ বড় করুন ] /[ - ফন্ট সাইজ ছোট করুন ]
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : কৃষির উপরই নির্ভর করে বেড়ে ওঠছে ঠাকুরগাঁওয়ের জনপদ । এ জনপদে বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল হচ্ছে কৃষি। ২-৩ দিনের ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টিতে এবার চলতি আমন মৌসুমে জেলার কয়েকটি উপজেলায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে
ধান গাছ থেকে শীষ বের হয়েছে কেবল মাত্র । আর কয়েক দিনের মধ্যে সেই শীষে ধানের দানাগুলো পরিপুষ্ট হবে। ধানরে দানা পরিপুষ্ট হওয়ার আগেই সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও দমকা বাতাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে আমনের ধান ক্ষেত নুয়ে পড়েছে। এতে কৃষকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে বলে মনে করছেন জেলার কৃষকরা।
জেলার হরিপুর উপজেলায় গত সোমবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত ও দমকা বাতাসে উপজেলার জনজীবন দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। শুরু হওয়া হালকা-বৃষ্টিপাত ও দমকা বাতাসে ঘরবাড়ী গাছপালার তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে শতশত হেক্টর জমির আমন ক্ষেত মাটিতে হেলে পড়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শতশত আমন ক্ষেতে বৃষ্টিপাত ও দমকা বাতাসে হেলে পড়া ধানের শীষ পঁচে নষ্ট হওয়ায় আশংকা করছেন কৃষকরা।
উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়নের লখড়া গ্রামের কৃষক আবু সাইম (৩৮),একই গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন (৫২), মোহাম্মদ আলী (৫৫) ও জহুরুল ইসলাম জানান তাদের প্রত্যেকের চার থেকে পাচ বিঘা করে আমন খেত বাতাসে হেলে পড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের ক্ষতি হওয়ায় আমরা বড় দুচিন্তায় আছি। আর কয়েকদিন পরেই ক্ষেতের ধান পাঁকতো। জানি না আমাদের কি হবে।
এদিকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা রানীশংকৈলে ঝড়ো বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি না হলেও প্রায় সহস্র হেক্টর জমির আমন ক্ষেত মাটিতে নুয়ে গেছে। কৃষকরা বলছেন অসময়ের( কার্তিকের) বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া আমাদের বুক ভরা স্বপ্ন এক নিমেশেই ভঙ্গ করে দিয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে এবার এ উপজেলায় ২১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৪-৫ ফুট উচু ধান গাছ অনেক কৃষক তাঁদের ফসল বাঁচাতে ক্ষেতে জমে থাকা পানির কারণে ধানের শীষ পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় গোছা বেঁধে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
রাণীশংকৈলের ভরনিয়া মন্ডলপাড়া এলাকার কৃষক মন্জুর হোসেন বলেন, আর মাত্র দশ থেকে পনেরো দিন পরই খেতের ধান পাকতে শুরু হতো। কিন্তু হঠাত এই বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে আমাদের খেতের ৬০-৮০ শতাংশ জমির আমন ধানের গাছ মাটিতে হেলে পড়েছে।কয়েকদিন পরে নুয়ে যাওয়া ধান গাছ গুলোতে পোকার আক্রমণ শুরু হবে। পরে ধানের পরিবর্তে শুধু সুষ্ক ছিটা পাওয়া যাবে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব না।
হরিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হুসেন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত ও দমকা বাতাসে ১০/১২ হেক্টর আমন ধান মাটিতে হেলে পরেছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের হেলে পড়া ধান গাছগুলো পরিদর্শন করছি। দ্রুত হেলে পড়া ধান ক্ষেত থেকে পানি নিস্কাশনের জন্য বলেছি।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ জানান প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়নি। এই নিয়ে কাজ চলছে। তবে পাকা ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। বৃষ্টি কমলে কৃষকরা ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারবেন। অন্যদিকে যে সব জমির ধানে সবে মাত্র শিষ এসেছে বা বের হয়নি ঐ জমির ধানের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে।